শুক্রবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা দিলে শনিবার রোজা। না হলে রোববার থেকে শুরু সিয়াম সাধনার মাস। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় এই দিন বাজারে অন্য দিনের চেয়ে বেশি ক্রেতার ভির ছিল। আর সেই সুযোগে বিক্রেতারাও নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
কয়েকজন ক্রেতা আরটিভি অনলাইনের কাছে অভিযোগ করেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানের আগে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ালে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে সরকারের এমন হুমকির মুখে ব্যবসায়ীরা আগেই ধাপে ধাপে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে দাম বাড়ার পেছনে বিক্রেতারাও দেখাচ্ছেন নানান অজুহাত।
গেলো মঙ্গলবার শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, রমজানে প্রতিদিনই সারা দেশে ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। রাজধানীতে প্রতিদিন চারটি করে এবং জেলা শহরগুলোতে কমপক্ষে একটি করে ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।
এছাড়া বাজারে সনদপ্রাপ্ত বিভিন্ন পণ্যের গুণগত মান ঠিক আছে কি না, সে বিষয়েও বিএসটিআইএর নজরদারি থাকবে বলে জানানো হয়। এদিকে কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টিসিবির দেয়া দামের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে রমজান সামগ্রী।
রাজধানীর পাইকারি কাঁচা বাজার কাওরন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি সাইজের মশুর ডাল বিক্রি করছেন ৯৫ থেকে ১শ টাকা, প্রতি কেজি খেজুর ১১০ থেকে ৩০০ টাকা, ৫ লিটার বোতল সয়াবিন তেল ৪৯০ থেকে ৫১০ টাকা।
মশলার বাজারে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, দেশি রসুন প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৩০, আমদানি করা রসুন প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, শুকনা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা, হলুদ প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা, আমদানি করা আদা মানভেদে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মানভেদে প্রতি কেজি লবণ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
মাংসের বাজারে দেখা যায়, গরু প্রতি কেজি ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকা, খাসি প্রতি কেজি ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা, দেশি মুরগী প্রতি কেজি ৩৮০ থেকে ৪২০ টাকা, রুই প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, ইলিশ প্রতি কেজি ৭৫০ থেকে ১,২০০ টাকা, পাকিস্তানি লাল মুরগি ২৯০ টাকা, প্রতি হালি ডিম ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গেলো ২৩ মে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেন। এর মধ্যে বিদেশি গরু ও মহিষ ৪৪০ টাকা, দেশি গরু ৪৭৫ ও ভেড়া বা ছাগীর মাংস প্রতিকেজি ৬২০ টাকায় বিক্রি হবে। এ দাম মনিটরিং করবে সিটি কর্পোরেশন। যদি বেশি দামে বিক্রি হয় তাহলে নেয়া হবে ব্যবস্থা।
চালের বাজারে দেখা যায়, প্রতি কেজি নাজির ৫০ থেকে ৫৬ টাকা, প্রতি কেজি পাইজাম ৪৫ থেকে ৪৮, প্রতি কেজি লতা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, প্রতিকেজি স্বর্ণা ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, প্রতি কেজি মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
ভোজ্য তেলও আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। আজকের বাজারে ৫ লিটারের বোতল ব্র্যান্ড ভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি লিটার ভোজ্য তেলের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৬ টাকা। লবণের কেজি ৩৮ টাকা, দারুচিনি ৩৬০ টাকা, জিরা ৪৫০ টাকা, শুকনা মরিচ ২০০ টাকা, লবঙ্গ ১৫০০ টাকা, এলাচ ১৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কাঁচা পণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি টমেটো কেজি ৫০ টাকা, সাদা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, কালো বেগুন ৬০ টাকা, শশা ৪৫-৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০-৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, ঝিঙ্গা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, করলা ৫০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৪৫ টাকা এবং লেবু হালি প্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক আঁটি প্রতি ১৫ টাকা, লালশাক ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২০ টাকা এবং লাউশাক ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গেলো ২৩ মে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, চাহিদার চেয়ে বাজারে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেশি রয়েছে। দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। দাম বাড়লে বুঝতে হবে তা ব্যবসায়ীদের কারসাজি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করবো তারা যেন রোজার মাসের পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। আমার প্রত্যাশা, ভোক্তারা যাতে খুশি হয় সেভাবেই ব্যবসায়ীরা পণ্যের বেচা-কেনা করবেন।
এমসি/ এমকে